কানাডায় বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উড়িয়ে তিন বন্ধুর ম্যারাথন দৌড়
প্রবাদে আছে গতিই জীবন স্থিতিই মরণ। স্থিতি সরাসরি মৃত্যু না ঘটালেও যন্ত্র নির্ভর আমাদের দৈনন্দিন স্থবির জীবন চর্চা আমাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য প্রধান হুমকি। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে একটিভ লিভিং বা সচল জীবন যাত্রার বিকল্প নাই। আর এই প্রেক্ষিতে বিশ্বব্যপী ম্যারাথন দৌড় প্রতিযোগিতা ক্রমেই জনপ্রিয় উঠছে।
১৯৬৩ সাল থেকে যাত্রা শুরু করে ক্যল্গেরি ম্যারাথন দৌড়, যা কিনা বর্তমানে কানাডার দীর্ঘতম এবং অন্যতম জনপ্রিয় ম্যারাথন দৌড় প্রতিযোগিতা, সর্বশেষ ২০১৯ পর্যন্ত মোট আট বার আলবার্টা প্রদেশের শ্রেষ্ঠ রোড রেস হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে। এই প্রতিযোগিতায় দুই বছরের শিশু থেকে শুরু করে বয়োবৃদ্ধ সবার বিভিন্ন দূরত্বের দৌড় কিংবা হাঁটায় অংশগ্রহনের মাধ্যমে পুরো ক্যল্গেরি নগরী উৎসব মুখর হয়ে উঠে। বিভিন্ন দূরত্বের মধ্যে ফুল ( ৪২.২ কিমি) আর হাফ (২১.১) ম্যারাথন দৌড় সর্বাধিক জনপ্রিয় এই প্রতিযোগিতায়।
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১ এ অনুষ্ঠিত ম্যারাথন প্রতিযোগিতায় ক্যালগেরিতে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য একটু ভিন্ন অ’ভিজ্ঞতা ছিল- এই ফুল ম্যারাথন ক্যটাগড়িতে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশী তিনজন অংশগ্রহণ করেছেন- ক্যল্গেরিতে বসবাসরত দুই বাংলাদেশী প্রবাসী ডঃ খোকন চন্দ্র সিকদার ও নবাংশু শেখর দাস এবং বাংলাদেশ থেকে আগত প্রশান্ত রায়।
ডঃ খোকন চন্দ্র সিকদার বলেন, "কানাডার মাটিতে আমরা তিন বন্ধু বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে বিশ্বখ্যাত আন্তর্জাতিক ম্যারাথনে অংশ নিয়ে একদিকে যেমন প্রিয় মাতৃভূমির প্রতি সম্মান জানাচ্ছি, অপরদিকে দেশের মানুষদের একটিভ লিভিং এ অভ্যস্ত হতে প্রেরনা জাগাতে চাচ্ছি। বাংলাদেশের জেলায় জেলায় এমনকি উপজেলা শহরগুলোতে দৌড়, সাইক্লিং সহ বিভিন্ন একটিভ জীবনযাপনের ট্রেনিং ইন্সিটিউট এবং এর প্রতিযোগিতা হওয়া উচিত। এতে করে প্রায় সব বয়সী মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের অভ্যাস আবার ফিরে আসবে। অল্পতেই অসুস্থ হওয়া, ঘন ঘন ডাক্তারের সান্নিধ্যে আসার প্রয়োজনীয়তা কমে আসবে, এবং যুবসমাজের মধ্যে ইভ তিজিং সহ বেশ কিছু অপরাধে জড়িয়ে পরার প্রবনতা কমে আসবে। "
প্রশান্ত রায় স্কোশিয়া ব্যাংক ক্যালগারি ম্যারাথনে দৌড়ানোর জন্য ঢাকা থেকে ক্যালগেরি পর্যন্ত হাজার হাজার কিলোমিটার পাড়ি দিয়েছেন। ৪২.২ কিলোমিটার শেষে ফিনিশ লাইনে এসে প্রশান্ত রায়ের অনুভূতি জানতে চাইলে তিনি শুধু একটি কথাই বললেন, “স্বপ্ন পূরণ, এবং তা সম্ভব হয়েছে শুধু মাত্র বন্ধু খোকন সিকদারের একান্ত ইচ্ছায়।” কথা প্রসঙ্গে তিনি আরো যোগ করেন, “মানসিক ও শারীরিক সাস্থ্য সুস্থ রাখার একমাত্র উপায় হাঁটা অথবা দৌড়। এর কোন বিকল্প নেই। অনেকেই এটাকে কস্টের মনে করেন, কিন্তু শুরু করলে যে ফিজিক্যাল ও মানসিক প্রশান্তি আসে, তা উপলব্ধি করার পর কেউ এটা ছাড়তে পারবে না। তিনি আরো বলেন, ডাক্তার ও ঔষধ এড়াতে চাইলে নিয়মিত হাঁটা এবং দৌড়ানোর কোন বিকল্প নেই।” পরিশেষে বলতে চাই, ছোট ভাই নবাংশু উৎসাহ আমাকে প্রাণবন্ত করে ফিনিশ লাইন পর্যন্ত পৌঁছাতে।”
ইউনিভার্সিটি অব ক্যল্গেরির পি এইচ ডি (ক্যন্ডিডেট) নবাংশু শেখর দাস বলেন “পরিকল্পনাটা ছিল ২০১৯ থেকেই , তবে বাস্তবায়নটা থমকে যায় কোভিড-১৯ ভাইরাসের মহামারির কারণে ২০২০ ক্যল্গেরি ম্যারাথন দৌড় প্রতিযোগিতা সরাসরি না হয়ে ভার্চুয়ালি হবার কারনে। এবছরও ক্যল্গেরি ম্যারাথন দৌড় দুটো ফরম্যটে হয়েছে ভার্চুয়ালি আর সরাসরি । তবে শুরু থেকেই একটা শঙ্কা ছিল আদৌ সরাসরি অনুষ্ঠিত হবে কিনা , কিন্তু আমরা আমাদের ট্রেনিং বাংলাদেশ এবং কানাডাতে সমান তালে চালিয়ে যাচ্ছিলাম। স্বপ্ন ছিল একটাই - ক্যল্গেরি ম্যারাথনে বাংলাদেশের মানচিত্র বুকে নিয়ে দৌড়ে চলা।”
এই তিন বাংলাদেশীর ফুল ম্যারাথনে অংশগ্রহণ ক্যল্গেরি তথা বিশ্বজুড়ে বাংলদেশী কমিউনিটিতে স্বাস্থ্য সচেতনতা সৃষ্টি করবে বলে আশা করি।