Cover img
image

বনলতার দেশে জীবন আনন্দময়

একটা শাখা নদী পার হয়ে যখন সাগরের মধ্যে প্রবেশ করা হয়, যার দুইপাশ এবং সম্মুখের দৃস্টিসীমা আকাশে গিয়ে পৌঁছায়, তখনকার অনুভূতি কেমন? সেই বিশালত্বের মাঝে  নিজেকে হারানোর অনুভূতি ও সীমারেখার বাইরে থাকে। বলে বুঝানো যায় না।

সাগরের যতটা গভীরে যাওয়া যায় রহস্য উন্মোচিত হয় ততটাই। আর সেই রহস্য উন্মোচনের দ্বার উন্মুক্ত করে দিয়েছিল কয়েকজনআবিস্কারক। যার মধ্যে প্রশান্ত দা, বর্ষা, শাহজাদা অন্যতম।

বলছিলাম সদ্য সমাপ্ত হওয়া নাটোরের চলনবিল হাফ ম্যারথনের কথা। ঘোর এখনো কাটেনি।

দশ কিলোমিটার অংশগ্রহনকারীরা সেদিন সেই শাখা নদীতেই সাঁতরে বাড়ি ফিরেছেন। স্বাদ পাননি সত্যিকারের চলনবিল নামকসমূদ্রের।

টোটাল আয়োজন সম্পর্কে যদি বলতে হয়, তা অসাধারন। একটা টিম, টিমওয়ার্ক এবং নেতৃত্ব যে কতটা পারফেক্ট হলে এরকমআয়োজন সম্ভব, তা সকল অংশগ্রহনকারীরা অনুধাবন করতে পেরেছেন নিশ্চয়ই।

তারপরও যদি বলি, সকল ভলেন্টিয়ার পুরোটা সময় ছিলেন প্রাণবন্ত। এক কথায় যদি বলি, রানারদের প্রতি তাদের আচরনঅভিভাবকদের মতন স্নেহমাখা।

সবচে বড় কথা, ইভেন্টের A টু Z কোথাও একটুক্ষনের জন্যও ছন্দপতন হয় নি। কয়েক রাত নির্ঘুম থেকেও আয়োজকদের কারো মধ্যেকোন ক্লান্তির ছাপ দেখা যায় নি। পরিশ্রান্ত, ক্লান্ত তো ছিলেন, সে আর বলতে হয় না, তারাও তো রক্তমাংসের মানুষ, ভিনগ্রহের কেউনন। কিন্তু সেটা তারা বুঝতে দেন নি অনুস্ঠান শেষ না হওয়া অব্দি।

একটা পাবলিক প্রগ্রাম আয়োজন সার্থক করার পিছনে চলতে থাকে দীর্ঘ কয়েক মাসের অক্লান্ত পরিশ্রম, যন্ত্রনা এমনকি গন্জনাও।আয়োজকদের কয়েকজনের সাথে ঘনিস্ঠ সম্পর্ক থাকায় (শুধু ঘনিস্ঠই নয়, সম্পর্কটা আত্মিক পর্যায়ের) তাদের পরিশ্রম ও যন্ত্রনারউত্তাপের আঁচ আমিও কিছুটা পেয়েছি।

তাদের পরিশ্রম সার্থক, এটাই ভালোলাগার।

ভালো পরিবেশ, ভালো ভিউ দেখলে ছবি তোলা আমার পুরানো স্বভাব। এরকম কিছু ইভেন্টের ছবি তোলার পর বেশ কয়েকটাইভেন্টের তোলা হয় নি। দৌড়ের মাঝে ছবি তুললে থামতে হয়। চলার গতি এলোমেলো হয়ে যায়। ফলে হাঁটতেও সমস্যা হয়। এজন্যছবি তোলা বাদ দিয়েছিলাম। কিন্তু চলনবিলের মহাসমূদ্রে এসে নিজেকে আটকানো ছিল অসম্ভব। তাই সূর্যোদয় দিয়ে শুরু।

লাইভ ইভেন্টের মধ্যে এটা আমার ২১ তম ২১ কিলো। দিনটাও ছিল স্মরনীয়। এই স্মরনীয় দিনটাকে আরো স্মরনীয় করেছেনআয়োজকরা। প্রয়াত টুকু জামিল ভাইয়ের স্মরনে তার পতাকা বহনকারী হিসেবে আমাকে সম্মান জানিয়েছেন। এজন্য তাঁদের প্রতিচিরদিনের কৃতজ্ঞতা।

সবকিছু মিলিয়ে আমার রানিং জীবনের একটি অন্যতম সেরা দিন। স্মরনীয় এই ২১ তম ২১ কিলো রান এবং অর্জিত মেডেল প্রয়াতটুকু জামিল ভাই এবং আমার সহযাত্রী রিমন ভাই, আয়েশা আপা, সোহাগ, কামরুল ভাই, আইরিন কে উৎসর্গ করলাম। এবংসবকিছু মিলিয়ে আয়োজকদের প্রতি কৃতজ্ঞ, আমাকে এতকিছু দেয়ার জন্য।

শেষ হইয়াও হইলো না শেষের মত রান শেষে ক্লান্ত শরীর নিয়ে যখন ফুডবুথে গিয়ে দেখেন একটা প্যাকেট (স্যান্ডউইচ, বুট, ডিম), UHT Milk, শশা, তরমুজ, নাটোরের কাঁচা গোল্লা, দই, এবং তার পাশেই তেতুল, কাঁচামরিচের ধোঁয়া উড়ানো চা।

প্রশ্ন হলো, আপনি কোনটা আগে নিবেন?

টকটকে লাল তরমুজের ফালি অনেকগুলো কুচকুচে কালো চোখে যখন আপনার পরিশ্রান্ত মুখটার দিকে তাকিয়ে থাকবে, তখনতাকে অগ্রাহ্য করে নিশ্চয়ই অন্য কিছু গ্রহন করাটা তার প্রতি অন্যায় হবে।

আমি তাই করেছি, একটা না পর পর দুই দুটো।

“আমারে দুদণ্ড শান্তি দিয়েছিলো নাটোরের বনলতা সেন।”

    - জীবনানন্দ দাশ

আমাকে দুদন্ড শান্তি দিয়েছিল নাটোরের (চলনবিল) হাফ ম্যারাথন।
বনলতার দেশে জীবন আনন্দময়।